প্রতিবছর বাংলাদেশে সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য। যার মধ্যে শুধু স্মার্ট ডিভাইসেই সৃষ্টি হচ্ছে সাড়ে ১০ টন ই-বর্জ্য। অন্তত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২ ইউনিট নষ্ট টেলিভিশন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ১ দশমিক ৭ লাখ টনের মতো ই-বর্জ্য। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই, এই বর্জ্য বাড়ছে ৩০ শতাংশ হারে।
শনিবার (৩ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ আইসিটি জর্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) আয়োজিত ‘ই-বর্জ্যের কার্বন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: কারণ ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তারা।
বক্তারা জানান, ২০২৫ সাল নাগাদ কোটি টনের ই-বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে বিলিয়ন ইউনিট স্মার্ট ডিভাইস উৎপাদন হবে। কম্পিউটার পিসিবিভিত্তিক ধাতু রূপান্তর ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে। যা ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ মানবিক সংকট। সংকট নিয়ন্ত্রণে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার সঙ্গে দেশ থেকে দেশে প্রবেশ করা রিফার্বিশ ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এর স্কুল অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন। তিনি বলেন, “ বাংলাদেশে ই-বর্জ্যের কোনো গাইডলাইন নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা তৈরি করা দরকার।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই প্রাসঙ্গিক। এ জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি, ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার।”
সার্ক সিসিআই (বাংলাদেশ) নির্বাহী কমিটির সদস্য শাফকাত হায়দার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে, ই-বর্জ্য ঝুঁকি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, “আজকের ইলেকট্রনিক্স পণ্য আগামী দিনের ই-বর্জ্য। ল্যাপটপ-কম্পিউটারের চেয়ে কি-বোর্ড, মাউস থেকে ই-বর্জ্য বেশি হচ্ছে। তাই এগুলো কোথায় ফেলতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে “ তিনি বলেন, “২০২২ সালের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধিমালা অনুযায়ী, এসব পণ্য যারা উৎপাদন করবেন তাদেরই ফিরিয়ে নেয়ার বিধান রয়েছে। তাবে, তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।”
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিইআরএম পরিচালক রওশন মমতাজ বলেন, “আমরা বুয়েট থেকে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে ই-বর্জ্য আইন ২০০১ এর একটি খসড়া তৈরি করেছি। রি-ইউজ মনেই ই-বর্জ্য নয়। তাই আমি একে ই-রিসোর্স হিসেবে অভিহিত করতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “এজন্য, এগুলোর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হাইটেক পার্কে যদি রিসাইকেল প্ল্যান্ট করা যায়, তবে এটি সম্পদ হিসেবে উপযোগ সৃষ্টি করবে।”